নিজস্ব প্রতিনিধি
২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর রাতারাতি বদলে যায় অনেকের ভাগ্য।সেই ভাগ্যবানদের একজন ১নং ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম।ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করার সুবাদে খুব সহজে ঠিকাদার বনে যান ফুলগাজীর গোসাইপুর এলাকার মোঃ সেলিম। ফুলগাজী উপজেলার প্রয়াত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব একরামুল হক একরাম থাকাকালীন সময়ে সেলিম তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। কারণ চেয়ারম্যান একরাম ছিলেন সৎ এবং ন্যায়পরায়। ২০১৩ সালে আততায়ীদের হাতে একরাম নিহত হবার পর। ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলিম উদ্দিন মজুমদার। উপজেলা চেয়ারম্যান আলিম উদ্দিনের হাত ধরেই উত্থান ঠিকাদার সেলিমের। উপজেলা চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ লোক হবার সুবাদে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট পুলসহ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের টেন্ডার এলাহি এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নামে করে নেওয়া সেলিমের কাছে ছিল ডাল ভাতের মত।তবে এলাহি এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী সেলিমের বন্ধু বাবুল হলেও সমস্ত কাজকর্ম পরিচালনা করে সেলিম। এই প্রতিষ্ঠানটির সাইনবোর্ডকে সামনে রেখে পেছন থেকে কল কাঠি নেড়ে, সরকারি প্রকল্পের বিভিন্ন কাজে নয়ছয় করে নানান অনিয়ম দূর্নীতির মধ্য দিয়ে গড়েছেন টাকার পাহাড়। ফুলগাজী উপজেলার একাধিক রাস্তার টেন্ডার নিয়ে মেরামতের নামে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির জন্য এর আগেও স্থানীয় এলাকাবাসীদের তোপের মুখে পড়ে ঠিকাদার সেলিম। সে সময় সেলিমের অপকর্ম নিয়ে ফেনীর বেশ কয়েকটি স্থানীয় দৈনিকে সংবাদ প্রচার হয়। কিন্তু কোন কিছুতেই লাগাম টানা যায়নি মোহাম্মদ সেলিমের। স্থানীয়রা বলছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আলিম উদ্দিন মজুমদারের গাছাড়া মনোভাব স্বজনপ্রীতি ও বারবার দায় এড়িয়ে গিয়ে সমঝোতা করা মোহাম্মদ সেলিমের বেপরোয়া হয়ে উঠার প্রধান কারণ।২০২১ সালে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আলিম উদ্দিন মজুমদার এর সহযোগিতায় চেয়ারম্যানের আত্মীয় হবার সুবাদে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পায় ঠিকাদর মোঃ সেলিম। এরপর বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় ফুলগাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় তিনি। ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদেও আছেন চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম।স্থানীয়রা বলছে দলের নাম ভাঙিয়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর একের পর এক অনিয়ম দুর্নীতি করে আসছে চেয়ারম্যান সেলিম। তিনি নিজের মন খুশিমত স্বেচ্ছাচারীভাবে ইউনিয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন।চেয়ারম্যান এতটাই লাগামহীন যে নির্বাচিত ইউপি সদস্যরাও তার কাছে অসহায়। ইউপি সদস্যদের মতামতকে মূল্যায়ন না করে সকল গুরুত্বপূর্ন কাজের সিদ্ধান্ত তিনি একাই নিতেন।এছাড়াও সরকারের প্রদত্ত সকল প্রকার ভাতা প্রকৃত ভাতাভোগিদের না দিয়ে চেয়ারম্যান নিজের ইচ্ছামত তার পছন্দনীয় লোকদের প্রদান করেন। এমন নানান অভিযোগ এনে চলতি বছরের ২৮ শে নভেম্বর ১ নং ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের ১০ জন ইউপি সদস্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর সেলিমের বিরুদ্ধে অনাস্থা দেয়। সেই অনাস্থার সংবাদটি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর চেয়ারম্যান সেলিম আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।তার বিরুদ্ধে অনাস্থা দেওয়া ইউপি সদস্যদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে চেয়ারম্যান। দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করায় সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্যের স্বামীকে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ফুলগাজী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সেলিমের বিরুদ্ধে।ভুক্তভোগী ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ড (১, ২ ও ৩) এর মহিলা সদস্য রাহেনা আক্তারের স্বামী জালাল উদ্দীন উদ্দীন জানান, এক নিকটাত্মীয়ের ভোটার আইডি কার্ডের বিষয়ে ফুলগাজী বাজার থেকে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক হয়ে ফুলগাজী উপজেলা পরিষদে মোটরসাইকেল যোগে সঙ্গীসহ যাওয়ার সময় থানার সম্মুখ দিয়ে সড়ক পথে মোটরসাইকেল আরোহী সেলিম চেয়ারম্যানের সাথে ক্রসিং হয় তার।পরে ফুলগাজী রেলস্টেশন এলাকায় পৌঁছালে চেয়ারম্যান মোটরসাইকেল দিয়ে সামনে এসে একরকম ধাক্কা দিয়ে গতিরোধ করে গায়ের উপর তেড়ে এসে অকথ্য ভাষায় কথা বলেন বলে অভিযোগ করেন জালাল উদ্দিন। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান বারবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারকে মিথ্যা বলে ধমক দিতে থাকে। জালাল উদ্দীন চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে এটি সত্যি এবং চেয়ারম্যান দ্বারা মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগী হতে দূর্নীতি করে টাকা আদায় করা হয়েছে বলে জানান। প্রকাশ্যে এমন হুমকি দেওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন ছিল বলে জানান জালাল উদ্দীন। সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়ামিন মজুমদারও উপস্থিত ছিলেন। হুমকির বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জালাল উদ্দীন বলেন, থানায় নয় যেহেতু তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত তাই জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী ২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীকে তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন।সেলিম চেয়ারম্যান এতটাই বেপরোয়া যে তার হাত থেকে রক্ষা পায়নি সরকারি কর্মকর্তাও, তার বিরুদ্ধে রয়েছে ফুলগাজী উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে মারধর মারধর করার অভিযোগ।তখন বিষয়টি একাধিক সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হলে উপজেলা চেয়ারম্যান আলিম উদ্দিন মজুমদার সেলিমের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উভয় পক্ষকে বসিয়ে ঘটনা মীমাংসা করে দেন।হুমকি প্রদানের বিষয়ে অভিযুক্ত সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম বলেন,আমার বিরুদ্ধে আর কত মিথ্যে অভিযোগ দিবে তারা। নতুন করে আমাকে নিয়ে চক্রান্ত শুরু করছে একটি মহল।অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি বা আমার লোকজন কেউ কাউকে হুমকি দেয়নি। মানুষের সাথে কথা বলা যদি হুমকিধমকি হয়ে যায় তার বিরুদ্ধে যদি অপপ্রচার রটায় তবে তা খুবই দুঃখজনক।এবিষয়ে আরো জানতে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আলিম উদ্দিন মজুমদারের ব্যবহৃত মুঠোফোনের নাম্বারে (০১৮১৯৩১১৪৬৫) একাধিকবার কল দিয়েও সংযোগ না পাওয়ায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply