নিজস্ব প্রতিনিধিঃ-ফেনী জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের গাছ, রস ও গুড়।ফেনীর সোনাগাজী,দাগনভূঞা,ফুলগাজী,পরশুরাম,ছাগলনাইয়া উপজেলায়,একসময় এসব এলাকায় পরিপূর্ণ ছিলো খেজুর গাছে।আজ তা বিলুপ্তির পথে।এখন এ সমস্ত এলাকা গুলোতে খেজুর গাছের দেখা মিলবে হাতে গোনা কয়েকটি। এই খেজুরের গুড় ও রস ছিলো সর্বজন সমাদৃত। শীতের আগমনে গাছিরা ব্যাস্ত হয়ে পড়তো খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তার রস দিয়ে গুড় তৈরি করার কাজে।আর সেই খেজুর গাছের রস দিয়ে তৈরি করা গুড় দিয়ে শীতের সকালে গ্রামে তৈরি করা হতো নানান ধরনের পিঠা।রান্না ঘরের জানালা দিয়ে বাতাসে নাকে ভেসে আসতো পিঠা ফুলির মিষ্টি গন্ধ।অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি সময়ে গাছ থেকে গাছি রস নামানো শুরু করতো তখন গ্রামের প্রায় বাড়িতে নতুন ধানের চাউল দিয়ে খেজুরের রসের পায়েশ রান্না দুধ চিতই পিঠা বানানোর ধুম পড়তো।আর গ্রামের লোকজন স্বজনদের নিয়ে অতি আনন্দে পায়েশ ও দুধ চিতই পরিবেশন করতো বেড়াতে আসা অতিথিদের মাঝে।এখন থেকে পনেরো বছর আগেও দেখা মিলতো গ্রামগঞ্জে খেজুরের রস আহরণের দৃশ্যের।গাছিরা যখন খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য গাছ তুলতো তখন পাড়ার ছোট সোনা মনিরা গাছির পিছনে ঘুরঘুর করতো খেজুর গাছের চুমরী খাওয়ার জন্য ও গাছের লাল শরফার জন্য। এই শরফা পুড়িয়ে কচু পাতায় বেধে সন্ধ্যায় বাজি ফুটিয়ে আনন্দ উল্লাস করতো পাড়ার ছেলেরা।এখন আর এই উৎসব দেখা যায় না।সেইসব গ্রামীণ সংস্কৃতি এখন বিলুপ্তির পথে।পরিবেশবিদরা বলছেন অবৈধ ইটভাটার কারনে পরিবেশের বিরুপ প্রতিক্রীয়ার সৃষ্টির জন্য এই খেজুর গাছ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তাই এই প্রকৃতিক সম্পদকে বিলীনের হাত থেকে বাচাতে সরকারকে অগ্রনি ভুমিকা পালন করতে হবে।ফেনীর ফুলগাজী এলাকার গাছি রহিম মিয়া,আব্দুর শুক্কুর,আলতাফ হোসেন সহ ৭/৮ জন গাছির সাথে কথা হলে তারা বলেন আমরা খেজুরের রস ও গুড় তৈরীর কাজ ছেড়ে দেওয়ার পথে কারন আগে খেজুরের বাগান ছিলো, প্রতি বাগানে ১/২ শত গাছ থাকতো,অতি সহজে গাছ কেটে রস ও গুড় তৈরী করতে সহজ হতো কিন্তু এখন তা হয় না। এক গাছ থেকে আরেক গাছের দুরত্ব প্রায় ৫/৭শত হাত। তাছাড়া ইট ভাটায় প্রতি বছর লাখ লাখ গাছ কেটে ইট পোড়ানো হচ্ছে। যার কারনে গাছের ও শুন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এমন চলতে থাকলে কোন এক সময় খেজুর গাছ বিলীন হয়ে যাবে। সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিলে খেজুর গাছ আমাদের দেশ থেকে বিলীন হবে না। আমরা আমাদের ঐতিহ্য রক্ষা করতে পারবো।
Leave a Reply