মোঃ সাইফুল ইসলাম মজুমদার
পরশুরাম উপজেলার ৩নং চিথলিয়া ইউনিয়নের মালিপাথর গ্রামের মাঝখানে মালিপাথর টু শালধর বাজার সড়ক। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বেহাল দশা। অনেক দিন ধরে চলছে সংস্কার কাজ। তবে নানা অযুহাতে থমকে আছে সড়কটির সংস্কার কাজ। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।মোটরসাইকেল আরোহী ব্যাংক কর্মকর্তা মোঃ ইয়াকুব ও গালিব কম্পিউটারের স্বত্বাধিকারী একরামুল হক। দুজনের বাড়ি পরশুরাম উপজেলার ৩নং চিথলিয়া ইউনিয়নের মালিপাথর গ্রামের। দুইজনেই সকালে বাড়ি থেকে নিজ কর্মস্থলে রওয়ানা হয়ে সড়কটি শেষ করে গন্তব্যে পৌছলে তাদের চোখ মুখ থেকে শুরু করে প্যান্ট, জুতো সর্বত্র ধুলোয় ধূসর। দুজনের কালো জ্যাকেট ধুলোয় সাদা হয়ে গেছে। মঙলবার সকালে ৩নং চিথলিয়া ইউনিয়নের মালিপাথর গ্রামের মালিপাথর থেকে শালধর বাজার সড়ক ধরে চলতে গিয়ে তাদের এই দশা হয়।তারা জানান, বেশ কয়েকমাস ধরে সড়কটি প্রস্তকরণ ও পুনর্র্নিমাণের কাজ চলছে। এখনও দেওয়া হয়নি পিচ ঢালাই। ধুলো বালির কারণে সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী কয়েক হাজার মানুষকে এভাবে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত ধুলাবালির কারণে তৈরি হয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এতে মানুষের সর্দি, চর্মরোগ, কাশিসহ শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ বাড়ছে।এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন ব্যবসায়ী আবদুল মমিন। তিনি বলেন, এ সমস্যা আজকের নয়। অনেক দিন ধরে চলছে। সড়কের পাশের স্থাপনা কিংবা গাছ-পালা সবখানেই জমেছে ধুলোর আস্তরণ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সড়কটিতে সংস্কার কাজ ধীরগতিতে চলছে। এ অবস্থায় যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন ভাড়ায় চালিত অটোরিকশার চালকরা।সরেজমিনে দেখা যায়, মালিপাথর থেকে শালধর বাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কটি দিনের বেলায় ধুলোয় প্রায় অন্ধকার থাকে। এতে যাত্রী ও পথচারীদের চোখ মুখ বন্ধ করে নাক চেপে ধরে সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে। উন্নয়ন কার্যক্রম চলাকালীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত পানি দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও মানছে না তারা। যানবাহনের গতির সাথে উড়ে আসা ধুলায় সয়লাব আশপাশের এলাকা। দোকানপাট, মাদ্রাসা, মসজিদ সহ সবকিছুতে ধুলোর আস্তর জমছে। উড়তে থাকা ধুলোবালিতে ঝাপসা হয়ে আসে দৃষ্টিসীমা। এ অবস্থায় এখানকার মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে রোগীদের উপজেলা সদরে নিয়ে যেতে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।স্থানীয়রা যেকোনো মূল্যে দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের কাছে।সড়কের পাশে চা দোকানি জালাল আহম্মদ জানান, প্রতিদিন দোকানের সামনে তিন বেলা পানি ছিটাই তবুও কোনো কাজ হয় না। যানবাহনের গতির সাথে বাতাসে উড়ে আসা ইটের ধুলোয় দোকানের টেবিল চেয়ার লাল হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর মুছেও চেয়ার টেবিল পরিষ্কার রাখা যাচ্ছে না। সড়কটির দুরবস্থার কারণে অনেকে খুব বেশি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া উপজেলায় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।সড়কটির পাশে অবস্থিত সুপরিচিত মাদ্রাসা মালিপাথর মাদ্রাসায়ে আলীর মুহতামিম মাওলানা ওলি উল্লাহ দুঃখের সাথে তার অভিব্যক্তি করে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে কোমলমতি প্রায় ২ শতাধিক ছাত্রছাত্রী এই ইটের বালু, কণা, ধূলো-বালি অতিক্রম করে নিয়মিত মাদ্রাসায় আসতে হয়। দীর্ঘদিন এভাবে মাদ্রাসায় যাতায়াত করে প্রায় ছাত্রছাত্রী এখন সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাছাড়া অনেক অভিভাবক তাদের বাচ্চাদের দেখতে সড়কে চলাচল বাদ দিয়ে (দূরবর্তী) ভিন্ন পথ পাড়ি দিয়ে মাদ্রাসায় আসেন। যা অত্যান্ত কষ্টসাধ্য। এছাড়াও নিয়মিত যান চলাচলের কারণে ধূলার আস্তরণ বসে প্রতিষ্ঠানটি এখন চেনা-ই দায়। তিনি কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী করেন খুব দ্রুত সড়কটির পাকাকরণ কাজ সমাপ্ত করার জন্য।এ ব্যাপারে জানতে চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনকে একাধিক বার মুঠোফোনে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ মোস্তফা সড়কটির বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সড়কটি ঠিকাদারের ভুলের কারনে ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে। কেমন ভুল জানতে চাইলে বলেন, ঠিকাদার নাকি কাজের অর্ডার এনেছেন ১০ ফুট প্রশস্ত রাস্তার। কিন্তু সড়কটি বর্তমানে আছে ১৪ ফুট প্রসস্ত। তাই নতুন করে বরাদ্দ নিয়ে সড়কটি পাকা করণ করা হবে।পরশুরাম উপজেলা এলজি ইডির প্রকৌশলী শাহ আলম প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান, সড়কটি সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সড়কটি দীর্ঘদিন এভাবে আছে এটি সঠিক নয়। মাসখানিক সড়কটি এভাবে পড়ে আছে। কি সমস্যার কারনে সড়কের কাজ বন্ধ রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজের বরাদ্দ নেওয়ার সময় ইস্টিমিটে ভুল হওয়ায় কাজটি সম্পূর্ণ করতে সাময়িক দেরি হচ্ছে। আমরা পুনরায় কাজের ধরন দিয়ে কাগজপত্র ঢাকায় পাঠিয়েছি। আশা করি আগামি মাসের ১ম সপ্তাহে কাজটি সমাপ্ত করে দিবো। সংস্কার কাজ চলাকালীন ধুলো কমাতে পানি ছিটানোর নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, পানি ছিটানোর নিয়ম আছে তবে শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় পানি দেওয়ার পরেও বেশিক্ষন থাকেনা।
Leave a Reply