নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি বাস্তবায়নের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। চাকরিসূত্রে ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে কামাল চৌধুরী বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য হিসেবে চাকরি গ্রহণ করেন। বিভিন্ন পদে চাকরির পর ২০১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। তথ্যমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব থাকা কালে তিনি একই মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। পরবর্তীকালে কিছু সময়ের জন্য তথ্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ থেকে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ তিনি শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর মার্চ ২০১৪ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তাকে সরকারের সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। ২০১৬-এর শেষ দিকে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে অবসর গ্রহণ করেন।ইউনেস্কোতে দায়িত্বপালন, কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো নির্বাহী বোর্ডে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। এই নিযুক্তি ছিল ২০১৩-২০১৭ মেয়াদের জন্য। অধিকন্তু তিনি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে ইউনেস্কো নির্বাহী বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন ২০১৩-২০১৫ মেয়াদের জন্য। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ডের কনভেনশনস অ্যান্ড রেকমেনডেশনস (সিআর) কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। ইউনেস্কোর পাঁচটি সাবসিডিয়ারি কমিটি রয়েছে যার মধ্যে সিআর কমিটির একটি।এর সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা বর্তমানে তিরিশ। কনভেনশনস অ্যান্ড রেকমেনডেশনস কমিটি বছরে দুইবার সভায় মিলিত হয়ে ইউনেস্কোর শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক বিভিন্ন সনদ ও সুপারিশ বাস্তবায়নে বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলো থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনসমূহ মূল্যায়ন করে।একই সঙ্গে ইউনেস্কোর সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। এ কমিটির দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে শিক্ষকদের মর্যাদা বিষয়ে আইএলও-ইউনেস্কোর যৌথ বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন ম্যূল্যায়ন করা। কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বিজয় করা গ্রামে জন্মগ্রহন করেছিলেন। বাবা আহমদ হোসেন চৌধুরী ও মা বেগম তাহেরা হোসেনের ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে নারায়ণগঞ্জের গোদনইল হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক (এসএসসি) এবং ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন এবং ব্যাচেলরস ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।ড. কামাল চৌধুরী একজন আধুনিক বাঙালি কবি যিনি সত্তর দশকের সঙ্গে চিহ্নিত।তিনি একজন সুপরিচিত আধুনিক কবি। তার কবিতার প্রধান বিষয়বস্তু প্রেম ও দ্রোহ, সমাজচেতনা তার কাব্যপ্রেরণার অন্যতম সূত্র। তার কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য গীতিময়তা। তার অন্যতম কাব্যগ্রন্থ টানাপড়েনের দিন যাতে তিনি মুক্তছন্দে নতুন এক কাব্যভাষার অনুশীলন করেছেন। বাংলা কবিতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে ২০১২ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান করা হয়।প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন ছিল উন্মাতাল; এখানেই কাব্যলক্ষ্মীর কাছে চিরসমর্পণ; এখানেই রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, তসলিমা নাসরিনসহ সমসাময়িক কবিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা; এখানেই কবিতার সঙ্গে চিরকালের গাঁটছড়া; এখানেই নিজেকে কবিতা পথিক হিসেবে চিরচিহ্নিত করা। কবিতা লিখতে লিখতেই এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন সমাজবিজ্ঞানে। কিন্তু সেখানেই লেখাপড়ার গণ্ডী শেষ হয়ে যায় নি। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে সরকারি চাকরির অবসরেই নৃবিজ্ঞানে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভের বিষয়বস্তু গারো জনগোষ্ঠীর মাতৃসূত্রীয় আবাস প্রথা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯৮১’র বাংলা একাডেমি বই মেলাকে উপলক্ষ করে একদল তরুণ কবি জীবনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন; কামাল চৌধুরী তাদেরই একজন। এ উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দ্রাবিড় প্রকাশনী। একুশের বইমেলাতেই বেরিয়েছিল কামাল চৌধুরীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ মিছিলের সমান বয়সী যাতে কবিতা ছিল ৪৮টি। কবিতাগুলো ভাষা ও শৈলী বলে দেয় শামসুর রাহমান তাকে প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।কবিতাস্বরূপ তিনি ১৯৮০ দশকের প্রারম্ভে কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার কবিতায় সমসাময়িক প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। তার প্রথম গ্রন্থের নাম মিছিলের সমান বয়সী যার মধ্যে চিহ্নিত হয়েছে তার কবিসত্তার প্রধান প্রবণতা। তথাপি তিনি মূলতঃ গীতিকবিতায় সাবলিল। সমসাময়িক অন্যান্য কবিদের মতোই তার কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দের যৌথ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।প্রকাশনা কামাল চৌধুরীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ মিছিলের সমান বয়সী প্রকাশিত হয় ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে। এরপর চাকরি জীবনের ব্যস্ততা তাকে কবিতা থেকে কিছুটা দূরে ঠেলে দিয়েছিল। ’৮১ থেকে ’৯০ – টানা নয় বছর কোনো কবিতার বই প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনি;– এই বন্ধ্যাত্ব কেটে যায় ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে। এ বছর প্রকাশিত হয় কামাল চৌধুরীর দ্বিতীয় কবিতা-সংকলন টানাপড়েনের দিন । অতঃপর একে একে আরও আটটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। যথা:– এই পথ এই কোলাহল (১৯৯৩), এসেছি নিজের ভোরে (১৯৯৫), এই মেঘ বিদ্যুতে ভরা (১৯৯৭), ধূলি ও সাগর দৃশ্য (২০০০), রোদ বৃষ্টি অন্ত্যমিল (২০০৩), হে মাটি পৃথিবীপুত্র (২০০৬),প্রেমের কবিতা (২০০৮) এবং পান্থশালার ঘোড়া (২০১০)। ১৯৯৫-এ তিনি প্রকাশ করেছেন একটি বাছাই সংকলন নির্বাচিত কবিতা । এরই ধারাই ২০১১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশ করেছেন কবিতাসংকলন। ১১টি গ্রন্থ থেকে তিন শত নয়টি কবিতা এই গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। এ ছাড়াও কামাল চৌধুরী ২০০৭-এ প্রকাশ করেন কিশোর কবিতা সংকলন আপন মনের পাঠশালাতে। ১৯৯৫-এ আলী রীয়াজ-এর সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন সত্তর দশকের কবিদের কবিতা।সাহিত্যকর্ম কামাল চৌধুরী ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে এ কাব্যগ্রন্থগুলো রচনা করেন।তার রচিত কাব্যগ্রন্থগুলো হলো মিছিলের সমান বয়সী, টানাপোড়েনের দিন, এই পথ এই কোলাহল, এসেছি নিজের ভোরে, এই মেঘ বিদ্যুতে ভরা, ধূলি ও সাগর দৃশ্য, রোদ বৃষ্টি অন্ত্যমিল, হে মাটি পৃথিবীপুত্র, হে মাটি পৃথিবীপুত্র,পান্থশালার ঘোড়া, উড়ে যাওয়া বাতাসের ভাষা, অন্যমনস্ক অনুপ্রাস।পুরস্কার রুদ্র পদক,সৌহার্দ্য সম্মাননা (পশ্চিমবঙ্গ), কবিতালাপ সাহিত্য পুরস্কার, জীবনানন্দ পুরস্কার,সিটি ব্যাংক -আনান্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার, দরিয়ানগর কবিতা সম্মাননা, আসাম বিশ্ববিদ্যালয় সম্মাননা, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ল্যাব এইড-আমাদের সময় সম্মাননা, একুশে পদক – ২০২২ ( ভাষা ও সাহিত্যে)।
Leave a Reply