নিজস্ব প্রতিনিধি
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় সন্ধ্যা নামলে অবাধে চলে ফসলি জমির মাটি কাটার উৎসব। মাটি মাফিয়াদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না তিন ফসলি উর্বর জমি, নদীর চর, উঁচু ভিটা, এমনকি ক্ষুদ্র জলাশয়।সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া আনন্দপুরের ধোপাইছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্রামমান আদালত পরিচালনা করে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এতে দুই একজন আইনের আওতায় আসলেও অধিকাংশ মাটিখেকোরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে প্রতি বছর উপজেলায় আবাদি জমি আশঙ্কাজনকহারে কমে যাচ্ছে।এতে কৃষিজমি পরিণত হচ্ছে ডোবায়। যার ফলে দিন দিন ফসলের উৎপাদন কমছে, বেকার হচ্ছে কৃষক, পরিবেশ হচ্ছে দূষিত। এলাকার উর্বর আবাদি জমির পরিমাণ কমতে কমতে হুমকির মুখে পড়ছে কৃষি উৎপাদন। মাটি পরিবহনে ভারী ট্রাক ও মাহেন্দ্র ট্রলির ব্যবহারে গ্রামীণ সড়ক হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত।স্থানীয়দের দাবি, উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আবাদি জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে মাটি কাটার মহোৎসবে মেতেছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। মাটিখেকো সিন্ডিকেটের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত রয়েছে বলে জানায় এলাকাবাসী। সরেজমিনে দেখা যায় উপজেলার সকল ইউনিয়নের একাধিক স্থানে রাতে পাহারাদার বসিয়ে এস্কেভেটর দিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটছে মাটি মাপিয়ারা। পরে ট্রাক-পিকআপ দিয়ে সেই মাটি ইটভাটাসহ ক্রেতাদের পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।ট্রাক-পিকআপ এস্কেভেটর আওয়াজে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে জনসাধারণের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলেও অসহায় স্থানীয়রা। বাধা দিলে তাদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা বলেন, যারা মাটি কাটছে তাদের সবাই চেনে, কিন্তু হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করছে না। অন্যদিকে, মাটি ব্যবসায়ীরা দম্ভোক্তি করে বলছে, আমরা জমির মালিক থেকে মাটি ক্রয় করে বিক্রি করছি। হয়রানির ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, জমির মালিকরা প্রলোভনে পড়ে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করছে।এ ব্যাপারে আনন্দপুর ইউপি চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার বলেন, আমি আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রার্থী হলে আমি যদি নির্বাচিত হই, তারপরদিন-ই পুরো উপজেলায় মাটি ব্যবসা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষনা দিবো।অপরদিকে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিম বলেন, বিগত ১০ বছরেও কেউ বলতে পারবেনা আমি কোন মাটি ব্যবসায়ীদের সাথে ছিলাম। বিগত দিনের মতো বর্তমানেও মাটি কাটা রোধে আমি প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছি। ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, মাটি কাটায় আমাদের নীরবতার কোন সুযোগ নেই। এলাকাবাসীর কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ইতিমধ্যে আমরা অভিযান পরিচালনা করে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছি। ফসলি জমি রক্ষার্থে আমরা কাউকে ছাড় দেব না। এক্ষেত্রে তিনি এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।
Leave a Reply