নিজস্ব প্রতিনিধিঃ-৬ ডিসেম্বর ফেনী মুক্ত দিবস। এই দিবসটিকে স্মরনীয় করে রাখার জন্য ফেনী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে শহরের মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, র্যালী ও জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।পুষ্পস্তবক অর্পণ, র্যালী ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী।এ সময় ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান, পুলিশ সুপার জাকির হাসান সহ জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।প্রধান অতিথির বক্তব্যে নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি বলেন, আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য কাজ করবেন। আপনারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। যুদ্ধ থেকে হয়তো ফিরে নাও আসতে পারতেন। আপনাদের ছেলে মেয়েরা ছাত্র শিবির-বিএনপি করলে এটা দুঃখের বিষয়। আপনারা দেশ স্বাধীন করেছেন, এই দেশ আপনাদের। এই দেশের মানুষকে শান্তিতে রাখার দায়িত্ব আপনাদের। আপনাদের ছেলেরা ছাত্রশিবির করে। যারা এই দেশের স্বাধীনতা চায়নি তাদের পক্ষ যদি সমর্থন করে তাহলে এই দুঃখ কোথায় রাখবেন। তাই বিনয়ের সাথে বলতে চাই এই বিষয়গুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান বলেন, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ফেনী জেলা হানাদার মুক্ত হয়। সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার মুক্ত করেন। এই দিনটি ফেনীর জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখার জন্য প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে।উল্লেখ্য, ফেনীতে প্রথম পাক হানাদারদের প্রতিরোধ শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে। রাত ৮টার দিকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ফেনীর দিকে এগিয়ে আসছে এমন খবরে ফেনীর তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) খাঁজা আহম্মদের কাছে পৌঁছলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ছাত্র যুবকদের মাঝে, অনেকেই কুঠার-করাত নিয়ে রওনা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোহাম্মদ আলী ও দত্তসা দিঘীর দিকে সড়কের পাশে বড় গাছ কেটে প্রাথমিক অবরোধ সৃষ্টি করার জন্য। কিন্তু গাছ কাটার আগেই পাক সেনাদের অনেকগুলি কভার্ডভ্যান এগিয়ে আসতে দেখে প্রতিরোধকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। ২৬ মার্চ সকালে পাক সেনাদের অবস্থান জানাজানি হয়ে গেলে ফেনী হয়ে উঠে উত্তাল। স্বাধীনতাকামী ছাত্র-জনতা দেশীয় অস্ত্র নিয়েই দলে দলে শহরের সিও অফিস ঘেরাও করে। ২৩ এপ্রিল পাকিস্তানী বাহিনী নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে একযোগে এসে ফেনী পৌঁছে এবং ফেনীকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে যুদ্ধে পরাজিত করে ফেনী জেলাকে শত্রু মুক্ত করে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমনের মুখে ৫ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ফেনী ছেড়ে চট্টগ্রামের দিকে চলে যায়। এই দিনে সকালে মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন (পরবর্তীতে কর্নেল) জাফর ইমামের নের্তৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের বেশে ফেনী শহরে প্রবেশ করেন এবং শহরে শ্লোগান দেন।ফেনী স্বাধীন হয়েছে। দীর্ঘ আট মাস পর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পেয়ে আত্মীয় স্বজনরা এবং পরিচিতদের জড়িয়ে ধরে আনন্দ বেদনায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
Leave a Reply