★জবরদখল করে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসতে আমি ইচ্ছুক নয়।
-ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম।
★আমাকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। স্কুল থেকে কোনো বেতন নিইনা।
-অবসর প্রাপ্ত মাঈন উদ্দিন।
আলমগীর হোসেন
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের আহম্মেদ নূরনবী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাঈন উদ্দিন ২০১১সালের ১৬ই মার্চ অবসর নেন। কাগজে-কলমে অবসর নিলেও এখনো বয়েছেন স্বপদেই। নিয়ন্ত্রণ করছেন প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম।২০১৯ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন নুরুল আলম।এখনো পর্যন্ত তিনি প্রধান শিক্ষকের কোনো কাজ সম্পাদন করতে পারেন না। কাগজে কলমে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হলেও সকল কাজ সম্পন্ন করেন মাঈন উদ্দিন। সব ঠিক করেই প্রয়োজন হলে স্বাক্ষর দেয় নুরুল আলম।হিসাব রক্ষক ইয়াকুবও সকল কাজ করতে সিদ্ধান্ত ও পরামর্শ নেয় এবং বুঝিয়ে দেয় মাঈন উদ্দিনের হাতে।স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই জানেনা তাদের প্রধান শিক্ষক কে। কেউ মাঈন উদ্দিন আবার কেউ নুরুল আলমের নাম বলে। তবে বেশীর ভাগ শিক্ষার্থী মাঈন উদ্দিনের নাম বলছে।কিন্তু মাঈন উদ্দিন নিজেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পরিচয় না দিলেও নিজেকে উপদেষ্টা ও পরামর্শক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন। নিজেকে সভাপতির বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে এবং প্রতিষ্ঠানের থেকে বিনা পারিশ্রমিকে সময় দিচ্ছেন এমনটি জানালেও স্কুল হিসেবের ডকুমেন্টস থেকে জানা যায় তিনি প্রতি মাসে ১৬হাজার টাকা করে বেতন নিচ্ছেন।স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষের এখনো বসেন অবসর নেয়া প্রধান শিক্ষক মাঈন উদ্দিন। সকল কাগজপত্র ও আলমারির চাবিও থাকে মাঈন উদ্দিনের কাছে।২০২২সালের নভেম্বরে মাঈন উদ্দিনের অপসারণ ও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন তুলে স্কুলের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। সেসময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হিরন শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে আন্দোলন থেকে সরিয়ে নেয়।কিন্তু কোন অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে অবসর নেয়ার এক যুগ পরও তিনি বহাল তবিয়তে আছে তার উত্তর মিলছে না। এর দায়বার নিচ্ছে না কেউ।বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হলেই তারপর মাঈন উদ্দিন তার হাতে সব বুঝিয়ে দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করলেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল আলমকে একপেশে করে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেনা কেউ। যদি নুরুল আলম জবরদখল করে চেয়ারে বসতে ইচ্ছুক নয় এমন মন্তব্য করছেন তিনি। স্কুলের সভাপতিও নাকি জানেননা প্রধান শিক্ষকের অফিসে মাঈন উদ্দিন বসেন। এদিকে ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসা দেখেন স্বয়ং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আলম। যার কারণে তাকে এবিষয়ে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়।নুরনবী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মনসুর বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক তো মাঈন উদ্দিন স্যার। উনিই সব কিছু দেখা শুনা করেন। আরেকজন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করা হলে সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে নুরুল আলমের কথা বলে।ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম বলেন, জবরদখল করে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসতে আমি ইচ্ছুক নয়। আমি ২০১৯সালে যোগদান করি। এরপর থেকে মাঈন উদ্দিন স্যার সব কিছুই করে আসছেন। যদি কখনো কোথায়ও স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয় তখন আমার থেকে স্বাক্ষর নেয়। কাগজপত্রের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন সব কাগজপত্র মাঈন উদ্দিন সাহেবের কাছে। সেখানে আলমারীর ভিতর চাবিও উনার কাছে।স্কুলের হিসাব রক্ষক ইয়াকুব বলেন, পূর্ব থেকে হিসেব-নিকেশ মাঈন উদ্দিন স্যার দেখতো এখনোও তিনি দেখতেছেন। মাঝে মাঝে নুরুল আলম স্যারকে আমি দেখাই। মাঈন উদ্দিন স্যার স্কুল ফান্ড থেকে ১৬হাজার টাকা করে মাসিক বেতন নিচ্ছেন।স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি রাশেদুন নবী চৌধুরী জানান, বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমরা নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেবো। এতদিন মাঈন উদ্দিন সাহেব কিভাবে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসছেন আমার পূর্বের সভাপতি ভালো জানেন।অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাঈন উদ্দিন বলেন, আমাকে পরিচালনা কমিটি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক হিসেবে লিখিতভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি কোনো বেতন নিইনা। এছাড়াও সভাপতির পারিবারিক কাজ গুলো আমি দেখাশোনা করি বিধায় উনারা বিশ্বস্ত মনে করে আমাকে স্কুলের সার্বিক বিষয়ে দেখাশোনার জন্য বলেছেন তাই আছি। উনারা নিষেধ করলে আমি আসবোনা।আমাকে সভাপতি ব্যক্তিগতভাবে খরচাপাতি পাঠায়।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, মাঈন উদ্দিন প্রধান শিক্ষক পদ থেকে ২০১১ সালে অবসর নিলেও সেখানে নিয়ন্ত্রণ করছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে উনাকে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসা দেখতে পায়। এবং তাকে লিখিত জবাব দিতে বলি। সেটি জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে। আর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্কুল কর্তৃপক্ষের বিষয়।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, অবসর নেয়ার পর সেখানে থাকার কোনো সুযোগ নেই।বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply