★রোববার রাত থেকে উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন।
★আশ্রয়ন কেন্দ্রে যায়নি অধিকাংশ উপকূলবাসী।
★সাংসদ নিজাম হাজারী, ডিসি, এসপির উপকূলীয় অঞ্চল পরিদর্শন।
আলমগীর হোসেন
ফেনীর সোনাগাজীর উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবের বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে প্রবেশ করে জোয়ারের পানি। পাশাপাশি ভারি ও হালকা বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়ায় গাছপালা উপড়ে পড়ছে সড়কে। অনেকের ঘরের টিন উড়ে গেছে। ২৬ মে রোববার গভীর রাত থেকে পুরো উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের পূর্বে রোববার বিকেলে ফেনীর সাংসদ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার, পুলিশ সুপার সহ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা বারবার উপকূলবাসীর পাশে ছিলেন।
স্বেচ্ছাসেবকের টিম বারবার প্রচারনা চালালেও আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি উপকূলবাসীর বেশীর ভাগ মানুষ। তবে গরু, মহিষ, ভেড়া গুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে দেখা যায়। এদিকে ঝড়ের মধ্যে সোনাগাজী বালিকা পাইলট উচ্চ শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে দেখা যায়। তাদের পূর্ব থেকে কোনো নির্দেশনা না দেয়ায় তারা এসে ফিরে যায়।
প্রতিদিনের তুলনায় কয়েকফুট বেশী জোয়ারের পানি লক্ষ করা যায়। ২৭ মে সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় শুরু হওয়া জোয়ারের পানি একটার দিকে পূর্বে চেয়ে বেশী হওয়ায় লোকালয়ে প্রবেশ করে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব না কাটা পর্যন্ত উপকূলী ও দূর্যোগ প্রবন এলাকায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিলেও আজ সোমবার সকাল থেকে পৌরশহরে ভারী বৃষ্টি ও দূর্যোগ পরিস্থিতির মধ্যে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে বৃষ্টিতে ভিজে বিদ্যালয়ে আসতে দেখা গেছে।
সোনাগাজী বালিকা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার জানায়, ঘূর্ণিঝড় হলেও তাদের স্কুল বন্ধ দেওয়া হয়নি। আজ তাদেরকে মডেল টেস্ট পরীক্ষা থাকায় মা-বাবার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পরীক্ষা থাকায় বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও তারা বিদ্যালয়ে এসেছে।
জানতে চাইলে সোনাগাজী বালিকা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকে আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, দূর্যোগ ও উপকূলীয় এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের খবর টেলিভিশনে দেখে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানালে তিনি বন্ধের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলায় বন্ধ দেওয়া হয়নি। তবে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় আজ সকাল নয়টার দিকে বিদ্যালয়ের ফেসবুক পেইজে বন্ধের নোটিশ দিয়েছেন।
এদিকে পল্লী বিদুৎ সোনাগাজী জোনাল অফিসের ডিজিএম বালাই মিত্র বলেন, রোববার মধ্যে রাতে ভারী বৃষ্টি ও জড়ো বাতাসে বেশ কিছু এলাকায় গাছপালা পড়ে তার ও বিদ্যুতের খুটি ভেঙে যাওয়ায় পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মেরামতের পর বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হবে। তবে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে একটু সময় লাগবে।
উপজেলার চর খোন্দকার জেলেপাড়া এলাকার বাসিন্দা প্রিয় শফি উল্যাহ বলেন, দূর্যোগ পরিস্থিতির কারণে তারা অনেকটা ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন। বিদ্যুতের সঙ্গে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া এলাকার বাসিন্দা ও সিপিপির দলনেতা নুর নবী বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত বলবত থাকায় তারা এখনো মাঠে থেকে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে জনগনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলছেন। কিন্তু ভারী বৃষ্টি ও জড়ো বাতাস হলেও মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাইছে না।
উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, যে কোন দূর্যোগে তাঁর ইউনিয়নের লোকজন বেশি ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। সকাল থেকে বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে ক্ষয়ক্ষতির কথা শুনেছেন। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে তা সঠিক তথ্য বলা যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন,
আমরা ৪৩টা আশ্রয় কেন্দ্র, ফয়ার সার্ভিস, মেডিকেল টিম প্রস্তুত রেখেছি। ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে পর্যাক্রমে প্রায় ৩হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। মধ্য রাত থেকে ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার সব কয়টি এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলে সার্বক্ষনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝোড়ো বাতাসে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে নিরপন করা হবে।
সম্পাদক: মোঃ এনামুল হক পাটোয়ারী, অফিস: ৩৮১, অটোবি মার্কেট,(৩য় তলা) ট্রাংক রোড,ফেনী।, 3900 ফেনী বাংলাদেশ। মোবাইল নাম্বার: +8801816-701613, +8801836645511, ইমেইল: nayapaigam@yahoo.com nayapaigam77@gmail.com