
ফখরুল ইসলাম:
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, বাংলাদেশ কখনো আধিপত্যবাদী শক্তির কাছে মাথা নত করেনি, কখনো করবে না। খুনি হাসিনা বিগত সময়ে গুম-খুন করে দেশকে শ্মশানে পরিণত করেছিল। সে মনে করেছিল, চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে। তার অত্যাচার-অন্যাচারে মানুষের মহান বিপ্লবে তাকে ১৫ মিনিটে পালিয়ে যেতে হয়েছে। তাকে ও তার ফ্যাসিবাদকে আর ফিরিয়ে আসতে দেওয়া হবে না। দেশের মানুষ আর সে যুগে ফেরত যেতে চায় না। আর যারা দেশকে ফ্যাসিবাদী যুগে ফিরে নিতে চায় জাতি তাদের কখনো ক্ষমা করবে না।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ফেনীর কিং কমিউনিটি সেন্টারে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে শোক ও সংহতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সমাবেশের আয়োজন করে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট ফেনী জেলা শাখা।
এ সময় মঞ্জু বলেন, যে অপরাধে আরবার ফাহাদকে হত্যা করা হয়েছে, সেই একই অপরাধে ওসমান হাদিকে হত্যা করা হয়েছে। আবার ফাহাদ ফেনী নদী নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। ঠিক একইভাবে ওসমান হাদি দেশের রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। তার নিথর দেহ সারা দেশকে জাগিয়ে তুলছে। যারা বিগত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ফেনীর মহিপালে গুলি করে নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছে তারা আজ কোথায়? তাদের কর্মফলে তারা আজ দেশান্তরিত। ভবিষ্যতে যারা একই অন্যায় করবে তাদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। আমরা ২০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে দেশকে গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। সে মোতাবেক দেশ গড়ে তুলব। আমরা সে চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। সবাই মিলে নতুন বৃহৎ রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামীর নির্বাচন হবে হাদি, আবু সাঈদ হত্যার বিচারের নির্বাচন। আমরা বিচার ছাড়া ঘরে ফিরব না। দেশ সংস্কারে আমরা অনেক প্রস্তাব দিয়েছি। দেশে অব্যাহত চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। রাস্তাঘাটে নারীদের অপমান বন্ধ করতে হবে। চাঁদার জন্য পাথর মেরে মানুষ মারা বন্ধ করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করবে জাতি তাদের কখনো ক্ষমা করবে না।
ফেনী জেলা এবি পার্টির আহ্বায়ক মাস্টার আহছান উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ফজলুল হকের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার ভুঁইয়া, এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত, এবি পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম বাদল, ফেনী জেলা এনসিপির আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম সৈকত।
এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক মিয়া মোহাম্মদ তৌহিদ, এবি স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক কেফায়েত হোসেন তানভীর, এনসিপির ফেনী জেলা সদস্য সচিব শাহ ওয়ালী উল্লাহ মানিক প্রমুখ।
এর আগে সকালে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ (সদর) আসনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় ফেনী জেলা প্রশাসক মিজ মনিরা হকের কাছে থেকে তিনি মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, কুমিল্লা মহানগর আহবায়ক মিয়া তৌফিক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম বাদল, ফেনী জেলা আহবায়ক আহছান উল্যাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আফলাতুন বাকী, সদস্য সচিব ফজলুল হক, যুগ্ম সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম কামরুল ও অর্থ সম্পাদক শাহীন সুলতানী প্রমুখ।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর মজিবুর রহমান মঞ্জু সাংবাদিকদের বলেন, “মানুষের কাছে নিজের যোগ্যতা প্রচার করে ভোট চাওয়া আমার কাছে কখনো সভ্য কাজ মনে হত না। তবে আজকে নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে আমি জনগণের রায় মাথা পেতে নেওয়ার অঙ্গীকার করছি। আমি বরং আমার অযোগ্যতার কথাই তুলে ধরতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “ফেনীর জনগণ বিচার করবে, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পক্ষে ভোট আছে কিনা। নতুন রাজনীতি মানুষ চায় কিনা, সেই ফয়সালা করবে ফেনী-২ এর মানুষ। আপনারা যে রায় দেবেন, তা আমি মাথা পেতে নেবো।”
ফেনীর উন্নয়নের জন্য মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি না হলে, রাজনৈতিক দলের কেউ কারও সম্পত্তি দখল না করলে, প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারলে ফেনী হবে দেশের সবচেয়ে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও স্মার্ট জেলা। দূষণমুক্ত রাখার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।”
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র বিপ্লবী শরীফ ওসমান হাদীকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে আজ ২৪ ডিসেম্বর বুধবার ফেনীতে আয়োজিত শোক ও সংহতি সমাবেশে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন; ‘ন্যায় ইনসাফ ও গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করতে যত ভয় ভীতিই দেখানো হোক না কেন সন্ত্রাসবাদ ও আধিপত্যবাদের কাছে বাংলাদেশ আগেও কখনও মাথা নত করেনি ভবিষ্যতেও করবেনা।’ তিনি বলেন, যারা ১৫ বছর জুলুমতন্ত্র চালিয়েছে তাদের পালাতে ১৫ মিনিটও লাগে নাই, আগামীতে যারা জনগনকে জিম্মি করতে চাইবে তারাও জনরোষে পালাতে বাধ্য হবে।
ফেনী জেলা এবি পার্টির আহবায়ক মাস্টার আহসানুল্লাহর সভাপতিত্বে এনসিপি ফেনী জেলা সদস্য সচিব শাহ ওয়ালী উল্যাহ মানিক, এবি পার্টির সদস্য সচিব ফজলুল হকের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন গনতান্ত্রিক সংস্কার জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। বিশেষ অতিথি ছিলেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সামান্তা শারমিন,দক্ষিনাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসিনাত আব্দুল্লাহ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার ভুইয়া, এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার জোবায়ের আহমদ ভুঁইয়া,কুমিল্লা মহানগর আহবায়ক মিয়া তৌফিক, এবি পার্টির কেন্দ্রীয় এনসিপি ফেনী জেলা আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম সৈকত, এবি পার্টির সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম বাদল, জেলার সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক আফলাতুন বাকী, যুগ্ন আহবায়ক মোতাহের হোসেন বাহার,যুগ্ন সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম কামরুল, অর্থ সম্পাদ শাহীন সুলতানীসহ গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ।
সভায় মজিবুর রহমান মঞ্জু আরো বলেন, আগামী নির্বাচন হবে হাদি হত্যাকাণ্ডের বচারের নির্বাচন, সংস্কারের নির্বাচন। প্রয়োজনে যারা সংস্কার চায়, হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার চায় তাদের বৃহত্তর মোর্চা করে সংস্কার আর বিচার বিরোধীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি।
একই সমাবেশে এনসিপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন বলেন, আগামী নির্বাচনে সংস্কারের পক্ষে হ্যাঁ ভোট আর নতুন বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দিতে হবে। যারা টাকার বিনিময়ে বা দুয়েক্টা সিটের বিনিময়ে নিজেদের বিকিয়ে দেয় তারা কখনো রাষ্ট্রের পক্ষের শক্তি হতে পারে না। তিনি বলেন, আধিপত্যবাদের বিপক্ষে সর্বশক্তি নিয়ে লড়াই করে তরুন প্রজন্ম ফ্যাসিস্ট হঠিয়েছে, নির্বাচনেও ঐতিহাসিক ভুমিকা রাখবে।
সমাবেশের অন্যতম বিশেষ অতিথি এনসিপি’র দক্ষিণাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় যারা আমাদের হত্যা করতে চেয়েছিল তারা এখনও আমাদের খুন করতে চায়, বাংলাদেশের রাজনীতি বদলে দেয়ার জন্য আমরা যে সংস্কারের দাবি তুলেছি জীবন গেলেও আমরা তা থেকে পিছপা হবোনা।’ তিনি বলেন, যারা শহিদ ওসমান হাদিকে গিনিপিগ বলে, তার নামটাও ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারে না তাদের এই প্রজন্ম প্রত্যখ্যান করবে। তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রিত লটারির মাধ্যমে যাদের ডিসি এসপি বানানো হয়েছে তারা অনেকে একটি দলের পা চাটা শুরু করেছে। কোন দলের দালালি করলে বেনজির-হারুনদের মত পালাতে হবে বলে সতর্ক করে দেন তিনি। হাসনাত বলেন, এখনো হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোন লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না, এটি অশনি সংকেত। প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ না করলে আবারো তরুন প্রজন্মের মুখোমুখি হতে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
Leave a Reply