শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৯ অপরাহ্ন
এইমাত্র পাওয়া সংবাদ :
Welcome To Our Website...

‘পাহাড় খেকো’ ওবায়দুলের পক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর!

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৬৯০ বার পঠিত

কক্সবাজার: দীর্ঘদিন ধরে যিনি কক্সবাজারের পাহাড়-টিলা কেটে সাবাড় করছেন, এ নিয়ে যার বিরুদ্ধে ৩২টি মামলা আছে, সেই ‘পাহাড় খেকো’ ওবায়দুল করিমকে একটি মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। আর আদালতে আবেদনটি করেছেন খোদ কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আজহারুল ইসলাম।

যিনি মামলার তদন্ত কর্মরকর্তা।

 

জানা গেছে, কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়া কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীর ছনখোলা ও ঘোনারপাড়া এলাকার সংরক্ষিত বনের পাহাড় ও টিলার দেড় কোটি ঘনফুট মাটি কেটে সাবাড় করেছেন ওই এলাকার ওবায়দুল করিম ও নাছির উদ্দিন রুনো।

এমন অভিযোগে গত ৩১ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক মুফিদুল আলমের স্বাক্ষরে এ দুই ব্যক্তিকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে তাদের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার সত্যতা পেয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

শুধু তাই নয়, ওই এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে এই ওবায়দুল করিমের বিরুদ্ধে কক্সবাজারে পাহাড় কাটা ও বালু লুটের ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে মামলা হয়েছে অন্তত ৩২টি। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ৩১ আগস্ট যার বিরুদ্ধে দেড় কোটি ঘনফুট মাটি কাটার অভিযোগ এনে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়, সেই আসামিকেই মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে বিশেষ জজ আদালতে আবেদন করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আজহারুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ওবায়দুল করিমের নেতৃত্বে ৭-৮ বছর ধরে ১৩ জনের একটি চক্র সদর উপজেলার পিএমখালী ও খুরুশকূল এলাকার সরকারি বনভূমি কেটে মাটি ও বালু পাচার করে আসছে। প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চান না। এমনকি গত ৬ মাসে ২০-২২টি ড্রাম্প ট্রাক নিয়ে চক্রটি অন্তত ৫০টি পাহাড় ও টিলা কেটে সাবাড় করে মাটি বিক্রি করেছে।

জানা গেছে, চার বছর আগে সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের পরানিয়া পাড়ায় সংরক্ষিত বনভূমির পাহাড় কাটার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎকালীন সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বাদী হয়ে ওবায়দুল করিমসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার বাদী সাইফুল আশ্রাব এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের ১৬ আগষ্ট সন্ধ্যায় ১০০ থেকে ১৫০ ফুট উঁচু একটি পাহাড় কেটে ড্রাম্প ট্রাকে ভর্তি করছিলেন ৫-৬ জন শ্রমিক। এ সময় পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে মোহাম্মদ ইউসুফ (৩৫) নামের এক শ্রমিক মারা যান এবং পাহাড় কাটা  সিন্ডিকেটের মূল হোতা হচ্ছে ওবায়দুল করিম।

এজাহারে আরও বলা হয়, তার নেতৃত্বে আরও ৫-৬ জন রয়েছে। এই সিন্ডিকেটটি মোহাম্মদ আমান উল্লাহর দখলে থাকা বনবিভাগের পাহাড়টি তার যোগসাজশে পরিবেশগত ছাড়পত্র না নিয়ে অবৈধভাবে কেটে মাটি বিক্রি করে আসছিল।

চার বছর ধরে ঝুলে থাকার পর এ মামলা থেকে ওবায়দুল করিমকে অব্যাহতি দিয়ে সৌদি প্রবাসী আমান উল্লাহ ও তার স্ত্রী বুলবুল আক্তারকে আসামি করে কক্সবাজার বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম। অভিযোগপত্রটি অনুমোদন করেন সদ্য বদলী হওয়া উপপরিচালক মো. নাজমুল হুদা।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মামলাটি অনেক পুরনো। আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। প্রায় এক মাস ধরে তদন্ত করে এ মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছি।

ওবায়দুল করিমকে চেনেন না জানিয়ে তিনি বলেন, মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে অনেকের কাছে ওবায়দুল করিমের সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী প্রমাণ না পাওয়ায়  মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছি।

ওবায়দুল করিমের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকার পরও কেন তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আসলেই আমি জানতাম না এই ওবায়দুল করিমের বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ আছে। যদি অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে প্রয়োজনে এই মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে ওবায়দুল করিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে অভিযোগপত্র অনুমোদনকারী কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সদ্য অন্যত্র বদলী) মো. নাজমুল হুদার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এলাকায় ‘পাহাড় খেকো’ হিসেবে চিহ্নিত এবং পাহাড় কাটার অভিযোগে খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’- এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওবায়দুলের নামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ৪টি মামলা রয়েছে। এমন ব্যক্তিকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দিয়ে পাহাড় কাটাকে উৎসাহিত করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার  বলেন, পাহাড় কাটা ও বালু পাচারের অভিযোগে গত বছরের জুন থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত ওবায়দুল করিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২৮টি বন মামলা হয়েছে। তাদের ১০টি ড্রাম্প ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। শুধু গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ১০টি মামলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো জনপ্রিয় সংবাদ সমূহ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত- 2024 এ ওয়েব সাইটে প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Design & Development By Hostitbd.Com