মোঃ সাইফুল ইসলাম মজুমদারঃ ফুলগাজীতে মানবেতর জীবন পার করছে বসবাসকারী বেদে সম্প্রদায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ফুলগাজী বাজারের রেলষ্টেশান নামক ¯’ানে ফুলগাজী থানা ও উপজেলা পরিষদের মধ্যবত্তি রেল লাইনের দু’পাশে গড়ে উঠা বস্তি বা বেদে পল্লী নামক ¯’ানে গেলে দৈনিক নয়া পয়গাম পত্রিকার ফুলগাজী প্রতিনিধির কাছে উঠে আসে তাদের মানবেতর জীবনের এই চিত্র।“খা খা বক্ষিলারে খা কাঁচা ধইরা খা, খেলা দেইখ্যা যে পয়সা না দেয়, তারে ধইরা খা” সাপের ঝাপি মাথায় নিয়ে পাড়া মহল্লায় ঘুরে বেড়ানো বেদে সম্প্রদায়ের নারী পুরুষদের এমন সুরেলা কন্ঠ আগের দিনে শোনেনি, এমন মানুষ পাওয়া ছিল ভার। বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের লোকায়ত সংস্কৃতির অনেকটা জুড়ে আছে এই বেদে সমাজ। গল্প, কবিতা, উপন্যাস থেকে শুরু করে রুপালী পর্দায় কত রুপে বেদে-বেদেনী উপ¯ি’ত হয়েছে, তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। পল্লীকবি জসিম উদ্দিন বেদের মেয়ের আগে এবং পরে অসংখ্য কবি সাহিত্যিকের কলমে নানা চিত্র উঠে এসেছে বেদেদের ঘিরে। যাযাবরের মতো জীবনধারায় বেদেদের রয়েছে বৈচিত্রপূর্ণ সমাজ ও সংস্কৃতি। রয়েছে নিজস্ব জীবনবোধ ও স্বকীয়তা। এখন আর আগের মত বহর নিয়ে ঘুরে বেড়ানো বেদে নারী পুরুষদের তেমন একটা দেখা যায় না। সাপ নিয়ে খেলা দেখানো, বাঁশির সুরে সুরেলা কন্ঠে বাংলা হিন্দি গানের উপ¯’াপন করার মতো সাপুড়েদের সংখ্যা ও কমে গেছে। জীবন-যাপনে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। যাযাবর জীবন ছেড়ে অনেকেই ¯’ায়ী বসত গেড়ে নিজেদের পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী পেশাকে জলাঞ্জলী দিয়ে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হ”েছন। শিক্ষার মান উন্নত হওয়ার সাথে সাথে এবং বন-জঙ্গল উজাড় হয়ে যাওয়ায় আগের মতো সাপও পাওয়া যায় না। তাছাড়া বেদেদের ওষুধে এখন বিশ্বাস নেই। তাই বেদেদের ঐতিহ্যগত পেশায় ধস নেমেছে। এতদিনকার সংস্কার-বিশ্বাসে আঘাত এসেছে। অভাবের কারণে সংসারে ভাঙন লেগেছে। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্র¯’ হ”েছ বেদে নারীরা। নতুন পরি¯ি’তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে তারা হারিয়ে যা”েছ অজানা অন্ধকারে। কালের আবর্তনে আজ বেদে সম্প্রদায় চিরাচরিত জীবন-প্রণালী ধ্বংসের মুখে। বর্তমানে বেদেদের একটি বড় অংশ ঠিকানাবিহীন ও অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। জীবিকার সন্ধানে তারা খুঁজে নি”েছ নানান পথ।ফুলগাজীর বেদে পল্লীর সরদার মোঃ নিজাম উদ্দিন জানান, দীর্ঘ ১৭ বছর যাবত ৩২টি পরিবার ফুলগাজীর এই রেল লাইনের দু’পাশে খড়ের চাউনি ও প্লাষ্টিকের চাউনি দিয়ে ঝোপ বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেছি। জীবন মান ও আয়ের উৎস্য সম্পর্কে জানতে চাইলে উঠে আসে তাদের করুণ জীবন চিত্র। তিনি বলেন আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক, জাতীয় পরিচয় পত্র দেখিয়ে বলেন আমরা কাগজে কলমে যদিও এদেশের নাগরিক হয়ে থাকি কিš‘ সরকার বাহাদুর আমাদের জন্য তেমন কিছু করেন না। দিনদিন আমাদের এই পূর্ব পুরুষদের পেশা সাপের খেলা, সিঙ্গা লাগানো, ঝাঁড় ফুক ও তাবিজ বিক্রি এখন আর মানুষ গ্রহন করে না। তাছাড়া আমাদের বর্তমান সন্তানরাও এই পেশায় নিযুক্ত হতে অনিহা প্রকাশ করতেছে। একটি দেশের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে খাদ্য, বস্ত্র ও বাস¯’ান এই তিনটি অধিকার থেকে আমরা প্রায় বঞ্চিত। আমাদের থাকার মতো নেই বাস¯’ান, সারাদেশের বিদ্যুতের জমকালো আলো আজও লাগেনি আমাদের গায়ে। নিজেকে খাঁটি মুসলিম দাবি করে বলেন মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য নেই মসজিদ, মক্তব। যেখানে পানির অপর নাম জীবন সেখানে আমাদের জন্য নেই টিউবওয়েল বা বিশুদ্ধ পানির ব্যব¯’া। কনকনে এই শীতের মাঝেও কোন ধনাঢ্য ব্যক্তি কিংবা জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে পা”িছ না শীত নিবারনের বস্ত্র। বেদে পল্লীর বসবাসরত মীর হোসেন জানান, তাদের সন্তানদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদনের জন্য সরকার বাহাদুর যদি আমাদের সহযোগিতা করেন তাহলে আমরা আমাদের এই বৃদ্ধ মা বোনদের নিয়ে কোনরকম দিনাতিপাত করতে পারবো।