নিজস্ব প্রতিনিধিঃ-ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার জি এম হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেরাজ হোসেনের শিক্ষাজীবন বিপন্ন হবার পথে। দু’দুবার নবম শ্রেণিতে থেকেও প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের আক্রোশের স্বীকার হয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য রেজিষ্ট্রেশনের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি মেহেরাজ হোসেন।১৯-২০ শিক্ষা বর্ষে নবম শ্রেণিতে ভালো রেজাল্ট না করার দোহাই দিয়ে মেহেরাজ হোসেনকে নবম শ্রেণিতেই রেখে দেন প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান। কোন কারন ছাড়াই মেহেরাজ হোসেনকে টি, সি নিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য বলেন প্রধান শিক্ষক, এমনটাই দাবী ছাত্র মেহেরাজ হোসেন ও তার অভিভাবকের।ছাত্রের অভিভাবক প্রধান শিক্ষকের কথা অনুযায়ী তাকে পুনরায় নবম শ্রেণিতে অধ্যায়নের সুপারিশ সরল মনে গ্রহন করে নেয়।অত:পর মেহেরাজ হোসেন স্কুল পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে দশম শ্রেণির সকল শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ সহ সর্বশেষ দশম শ্রেণির প্রাক নির্বাচনী পরিক্ষায় অংশও গ্রহণ করে। সে এ সংক্রান্ত যাবতীয় ফি ও সে যথারীতি পরিশোধ করে আসছে।ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানায়, সে তার সব সহপাঠী সহ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য ফরম ফিলআপ করতে গেলে প্রধান শিক্ষকের অফিস থেকে তাকে জানানো হয় যে, নবম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় তার রেজিষ্ট্রেশন সম্পূর্ণ করা হয় নাই। পরে মেহেরাজ জানতে পারে যে, শুধু সে ব্যতিত, তার সহপাঠীদের সবারই রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন হয়ে গেছে।উক্ত শিক্ষার্থীর মা এতে হতাশ হয়ে জানতে চেয়েছেন, শুধু মাত্র আমার ছেলের সাথে কেনো এমন টা হবে? আমরা গরিব। আমরা অনেক কষ্টে দিন পার করেও ছেলের পড়ালেখার জন্য যথা সম্ভব ব্যয় করছি।জানা যায় ছাত্রের বাবা একজন মোটর মেকানিক।এই নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্র জানায়, তারা শ্রেণি কক্ষে নিয়মিত না হয়েও তারা রেজিষ্ট্রেশন এবং ফরম ফিলআপ এর আওতায় এসেছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের কাছে বরাবরই কোন এক অজ্ঞাত আক্রোশের শিকার তাদের সহপাঠী মেহেরাজ হোসেন।ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা এ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি বিভিন্ন তাল-বাহানা করতে থাকেন।এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক জানান ভুল ক্রমে ছাত্রটি রেজিষ্ট্রেশন থেকে বাদ পড়ে যায়। এই ব্যাপারে করনীয় কি তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি করনীয় কী তা জানাবেন বলে অফিস থেকে বের হয়ে যান। বেরিয়ে যাওয়ায় সময় বলে যান ছাত্রটি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে বলেই এমনটি ঘটেছে, তখন তাকে হাজিরা খাতা দেখতে বললে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।এই নিয়ে ছাত্রের বাবা জানান, আমার ছেলে হয়তো মেধায় ভালো না ও হতে পারে, তবে সে জে, এস, সি পরিক্ষায় প্রথমবারেই উত্তীর্ণ হয়েছে। সে যখন নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেনি, তখন প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান সাহেব আমার গ্যারেজে গিয়ে আমাকে বলেন যাতে আমি আমার ছেলেকে তার স্কুল থেকে নিয়ে অন্যত্র ভর্তি করিয়ে দিই।এ মর্মে তিনি কোনরূপ কারন ব্যাখ্যা করেননি। এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান কোন প্রকার স্বচ্ছ বক্তব্য দেননি।যেখানে বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্ষেত্র থেকে ঝরে পড়া রোধে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, সেসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টির উদাহরণ মাত্র জি এম হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের এই প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান।স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, মিজানুর রহমান স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রকার দুর্নীতিমুলক কার্যকলাপের সাথে জড়িত। তিনি প্রাক্তন কমিটির কতিপয় অসাধু ব্যাক্তিসহ বিদ্যালয়ের অনুমানিক ২১ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই নিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি দিলদার হোসেন ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক কিছু টাকা আদায় করেছেন, যা তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নিজস্ব পেইজে উল্লেখ করেন।মেহেরাজ হোসেনের বিষয়টি বিদ্যালয়ের সভাপতি দিলদার হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীর অভিভাবক অথবা প্রধান শিক্ষক, কেউ তার সাথে কোন যোগাযোগ করেননি। তথাপি তিনি এ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।একজন প্রধান শিক্ষকের অযাচিত, অমুলক ও হীন আক্রোশের কারনে নিন্ম-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থী মেহেরাজ হোসেনের জীবনে কি প্রভাব ফেলবে, তা অনুমেয়।