সোনাগাজী প্রতিনিধি
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় ফেনীর সোনাগাজীতে বিশেষ সতর্ক বার্তা ও অর্ধশত আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখাসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগকালীন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরতদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার, চিড়া, গুড়, মুড়ি, বিস্কুট, ৫০ হাজার পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেটের ব্যবস্থা করাসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রিমালের প্রভাবে রবিবার (২ ৬মে) দুপুরের পর থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি সহ বাতাস বইতে শুরু করেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ (১৩ নং) আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেত (পুন:) ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ০৯ (নয়) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৯ (নয়) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা/ঝড়ো হাওয়া সহ ৬’রী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘন্টা) থেকে অতি ভারী (১৮৯ মিমি/২৪ ঘন্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধ্বস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয় উক্ত বিজ্ঞাপ্তিতে।দূর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি রোধে স্বেচ্ছাসেবক জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে উপকূলীয় চারটি ইউনিয়ন চর দরবেশ, চর চান্দিয়া, সোনাগাজী সদর ও আমিরাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে লোকজনের খোঁজখবর নিয়ে তাদেরকে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সচেতনতাসহ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়ন সি.পি.পি লিড়ার সমর বাবু জানান, ঘূর্ণিঝড়ের খবর পাওয়ার পর থেকে তার ইউনিট সাধারণ জনগণকে সচেতন করে যাচ্ছেন। এলাকায় মাইকিং করে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে বলছেন। এছাড়া গবাদিপশু গুলোকেও নিরাপদে সরিয়ে নিতে তারা প্রচারণা চালাচ্ছেন। এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রেখেছেন।চরদরবেশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ভুট্টু বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি রোধে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সি. পি.পি সহ একাধিক স্বেচ্ছাসেবক টিম প্রস্তুত রেখেছেন।ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির কর্মসূচির (সিপিপি) সহকারী পরিচালক মুনীর চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে উপজেলার সর্বত্র সিপিপির সদস্যরা কাজ করছেন। প্রতিটি এলাকায় সিপিপির সদস্যদের সহায়তায় জনগণকে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সতর্ক করে জানমাল ও গবাদিপশুর নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া বিষয়ে বলছেন। ঘূর্ণিঝড় আসায় উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা অনেকে আতঙ্কে রয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের দুর্যোগকালীন নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, উপজেলায় একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে এবং ১৪টি চিকিৎসক দল, জনপ্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও ভিডিপি এবং গ্রাম পুলিশের সদস্যরা মাঠে কাজ করবেন। দুর্যোগকালীন উদ্ধার তৎপরতাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য সিপিপির দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবকসহ আড়াই হাজার কর্মী প্রস্তুত রয়েছে।
Leave a Reply