ফেনীর আলোচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যাকাণ্ডের এক দশক পূর্ণ হয়েছে আজ।২০১৪ সালের ২০ মে একরামুল হক একরামকে ফেনীর বিলাসী সিনেমা হলের সামনে পুড়িয়ে গুলি করে হত্যা করে নিজ দলীয় নেতাকর্মীরা। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায়ে ৩৯ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন আদালত।পরবর্তীতে দন্ডপ্রাপ্তরা রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলেও তার শুনানি এখনও কার্য তালিকায় আসেনি। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় ডেথ রেফারেন্সের শুনানিও আটকে রয়েছে বছরের পর বছর। পৃথিবীজুড়ে আলোচিত নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ১০ বছরেও রায় কার্যকর না হওয়ায় নিহতের স্বজন ও সহকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।ফেনী জেলা জজ আদালত, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের জিএ একাডেমীর বিলাসী সিনেমা হলের সামনে প্রকাশ্যে গাড়ির গতিরোধ করে কুপিয়ে, গুলি করে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করা হয় একরামকে। ঘটনার রাতে তার ভাই রেজাউল হক বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ এ মামলায় তদন্ত শেষে একই বছরের ৩০ আগস্ট ৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আলোচিত এ মামলায় গ্রেফতারকৃত ১৬ জন আসামি আদালতে ঘটনায় জড়িত ছিলেন মর্মে ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধী দেন। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৫৬ জন আসামির মধ্যে ৩৯ জনের ফাঁসির আদেশ ও ১৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়। এদের মধ্যে সোহেল নামের এক আসামি রায় ঘোষণার আগেই র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।বর্তমানে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৯ আসামির মধ্যে ২২ জন কারাগারে রয়েছেন। বাকী ১৭ জনের মধ্যে ৮ জন আসামি জামিনে গিয়ে পলাতক ও ৯ জন আসামি ঘটনার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন। যাদের হদিস পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে এদের মাঝে কয়েকজন দেশ ত্যাগ করেছেন বলেও তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে।বর্তমানে এ মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন ২২ আসামি। তারা সবাই খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। এরা হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী সিফাত, আবু বক্কর সিদ্দিক, মো. আজমির হোসেন রায়হান, মো. শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, মো. সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইউম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, মো. সজিব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু।দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে জামিনে গিয়ে পলাতক ৮ আসামি হচ্ছেন ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়লা জেসমিন বড় মনির ছেলে আবিদুল ইসলাম, এমরান হোসেন রাসেল, জাহিদুল হাসেম সৈকত, চৌধুরী মোহাম্মদ নাফিজ উদ্দিন অনিক, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, আরমান হোসেন কাউসার ও জসিম উদ্দিন।এছাড়াও এ মামলার পর থেকেই গায়েব রয়েছেন ৯ জন আসামি। তারা শুরু থেকেই পুলিশি ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছেন। এরা হচ্ছেন, ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, রাহাত মোহাম্মদ এরফান আজাদ, শফিকুর রহমান, একরাম হোসেন, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, মহিউদ্দিন আনিছ, টিটু ও বাবলু।
Leave a Reply