শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০২:৪৩ অপরাহ্ন
এইমাত্র পাওয়া সংবাদ :
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কক্সবাজারগামী রিলাক্স পরিবহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে, ঘটনাস্থলেই ৫ জন নিহত । । স্লোভাকিয়ার জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী ফিকো কে হত্যার চেষ্টায় একাধিকবার গুলি। গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয় । । অভিযান চালিয়ে ফেনীতে কিশোর গ্যাং 'পিএনএফ' এর পাঁচ যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব । । দীর্ঘ দুইমাস পর ঘরে ফিরছেন এমভি আবদুল্লাহর নাবিক ফেনীর দাগনভূঞার ইব্রাহিম খলিল উল্ল্যাহ বিপ্লব । । শ্রমিক সংকটে সময়মতো ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না ফেনীর পরশুরাম উপজেলার কৃষকরা । । ফেনীতে কাঁচাবাজারে দামের আগুনে জ্বলছে সাধারণ মানুষ । ।
ব্রেকিং নিউজ :
ফেনীতে পাসের হার ৭৭.৬৫%, জিপিএ-৫ -১৩১৮ জন, শীর্ষে ছাগলনাইয়া। ইয়াছিনের নিথর দেহ, রাস্তায় পড়ে ছিলো সবাই ব্যস্ত ভিডিওতে ধর্ষণ ও ভ্রূণ-হত্যা মামলায় সোনাগাজী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ইকবাল হাসান বিজয় গ্রেপ্তার। আজ ৮ মে বিশ্ব গাধা দিবস বিষ খেয়ে আত্নহত্যা, ধূম্রজাল তৈরির পায়তারা কাল বৈশাখী ঝড়ে ফেনীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ই-প্রেস টিভি’ র বাংলাদেশ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা ফেনীতে ২ টি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম ও ১টির অস্ত্রোপাচার বন্ধের নির্দেশ পিপাসার্ত শ্রমজীবি মানুষের পাশে ফেনী লিও ক্লাব তীব্র গরমে সড়কে স্যালাইন-পানি হাতে ফেনী পৌর মেয়র

সোনাগাজীতে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ২০হাজার লিটার খেজুরের রস

  • আপডেট সময় : রবিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১০৫ বার পঠিত

★প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে ১৬লাখ টাকা।
★রসের মৌসুমে বিক্রির টাকায় ভরণপোষণ চলে ৫শতাধিক পরিবারের।

আলমগীর হোসেন
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা শীতকালে খেজুরের রসের মহাসাগর হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছরই শীতের শুরুতেই ফেনী সহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ অগ্রীম রসের জন্য মুখিয়ে থাকে সোনাগাজীর ৫শতাধিক গাছিদের দিকে। রসের মান ভালো থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষের চাহিদা রয়েছে সোনাগাজীর বিখ্যাত এই খেজুরের রসের প্রতি।এসব চাহিদা মেটাতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৫শতাধিক গাছিরা প্রায় ৩০ হাজার গাছ প্রস্তুত করার জন্য শীতের শুরুতেই কার্যক্রম হাতে নেয়। তবে ২০-২২হাজার গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। শুরুতে কম হলেও মাঝামাঝি সময়ে প্রতিটি গাছ থেকে ৪-১০লিটার রস পাওয়া যায়। প্রতি লিটার রস ৬০-৯০টাকায় বিক্রি করা হয়।উপজেলার সবচেয়ে বেশী রস পাওয়া যায় চরদরবেশ, চরচান্দিয়া ও আমিরাবাদ ইউনিয়নে। তবে খেজুরের রসের শহর বলা যায় চরদরবেশ ইউনিয়নের আদর্শগ্রামকে। এখানে রসের পূর্ণ মৌসুমে প্রতিদিন ৫হাজার লিটার সংগ্রহ করা হয়।এক গ্রামেই রয়েছে ছোট-বড় সাড়ে ৪হাজার খেজুরের গাছ। রস গুলোকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতে কয়েকজন যুবক অনলাইনেও কাজ করছে। তারা নিজ দায়িত্বে সূর্য উদয়ের পূর্বে রস গুলো পৌঁছে দেয় ক্রেতাদের নিকটে।অনলাইনে কাজ করা যুবকরা প্রতি মৌসুমে ৩-৬ লাখ টাকা উপার্জন করে থাকে।রসের মূল সিজন বাংলা সনের পৌষ ও মাঘ এ দুইমাস। তবে গাছ প্রস্তুতি করা হয় অগ্রহায়নের মাঝামাঝি সময়ে। এসময় রসের পরিমান কম থাকে।আবার ফাল্গুনের মাঝামাঝি সময়ে রসের পরিমান কমে যায়।সব মিলিয়ে ৩মাস রসের মৌসুম ধরা হয়ে থাকে। ইংরেজি সনের নভেম্বর ডিসেম্বর জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারিতে মূলত রস সংগ্রহ ও বাজারজাত করা হয়ে থাকে।শীতের আভাসের সাথে সাথে গাছিরা গাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু করে দেয়।এসময় কিছু শ্রমিক গাছ পরিস্কার করেই হাজার হাজার টাকা আয় করে থাকে। এরপর খুঁটি তৈরী করে গাছের আগায় লাগানো হয়। এবং পাত্র দেয়া হয়। সেখানে রস গুলো জমতে থাকে। প্রথম দিকে রস সংগ্রহকারীরা কেমন রস পড়তে পারে তার ধারণা দিতে একাধিকবার নজর রাখে। মূলত দুপুরের পর গাছে হাঁড়ি বেঁধে দেয়া হয়। এবং ভোর রাতে সেগুলো নামিয়ে একসাথে করে কলসে করে বাজারে নেয়া হয়। প্রতি কলসে ৫-১০ লিটার রস থাকে। ১০লিটার রস বিক্রি করা হয় ৮শত-১হাজার টাকায়।সূর্য উদয়ের পূর্বে রস গুলো বিক্রি করে দিতে হয়। দেরী হলে রসের মান ধীরে ধীরে অবনতি হতে থাকে। টক হয়ে যাওয়া, স্বাদ কমে যাওয়া, রং বদলে যাওয়া সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।রস সংগ্রহ কারীরা তাই সূর্য উদয়ের পূর্বেই রস বিক্রি করতে পারলেই মুক্তি মনে করে। তবে রস থেকে গেলে সেগুলোকে পাতিলে করে ঝাল দিয়ে ঘাড়ো করে রাভ এবং গুড় তৈরী করেও বিক্রি করে অনেকে। কাঁচা রসের বাজারের চাহিদা ভালো থাকায় দাম ভালো পাওয়া যায়। রাভ ও গুড়ের চাহিদা থাকলেও পরিশ্রমের সাথে হিসেব মিলিয়ে তেমন লাভবান হওয়া যায় না।এক কেজি রাভ ও গুড তৈরী করতে ৬-৮লিটার রস প্রয়োজন হয়।আর সেগুলো কেজি হিসেবে ৪০০-৫০০টাকায় বিক্রি হয়।উপজেলার আদর্শগ্রাম, মদীনা বাজার, সোনাপুর, বাদামতুলী সহ বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী রসের হাট বসে।সবচেয়ে বড় রসের হাট বসে সোনাগাজী পৌর শহরে। এখানে ভোর হলেও উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে রস নিয়ে শত শত গাছি ও সংগ্রহকারীরা অবস্থান নেয়। এবং এখানেই সূর্য উদয়ের পূর্বে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ গুলো এসে তরতাজা কাঁচা রস নিতে ভীড় করে।উপজেলা কৃষি অফিস কর্তৃপক্ষ জানায়, উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে রস সংগ্রহ করে প্রতিদিন ১৮-২৫হাজার লিটার বাজারজাত করা হচ্ছে। এতে ১৬-১৮লাখ টাকার লেনদেন হচ্ছে।যা কৃষিজীবী পরিবারে ব্যাপকভাবে উন্নয়ন সাধনে ভূমিকা রাখছে। তাল গাছের চারার প্রতি সরকার গুরুত্ব দিলেও খেজুর গাছের প্রতি ঐরকম গুরুত্ব না দেয়ায় এবিষয়ে গাছি বা রস সংগ্রহ কারীদের তেমন সুযোগ সুবিধা দেয়া যায়না। তবে বিগত বছর গুলোতে ৪০০-৬০০চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।আদর্শবাজার অনলাইনের পরিচালক মোহাম্মদ সজিব রাইহান বলেন,প্রতিবছর রসের মৌসুমে বিক্রি করে ৪-৫লাখ টাকা বাড়তি আয় করি।পরিশ্রম বেশী হলেও এটা আমি উপভোগ করি। ২০২৪ সালেও তার কম হবে না। এখন পর্যন্ত ২লাখ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন আমি ৬০০লিটার রস সংগ্রহ করে তা বাজারজাত করছি। তবে বেশীরভাগ রস অনলাইনেই অগ্রীম অর্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হয়ে যায়।আদর্শগ্রামের সিএনজি চালক শাহীন আলম বলেন, শীতের মৌসুমে অন্যান্য চালকের তূলনায় আমাদের ভালো আয় হয়। অন্যান্য সময়ে ভোরে ঘুমে কাটালেও শীতের মৌসুমে রসের হাঁড়ি গুলো সোনাগাজী উপজেলা সহ ফেনীর বিভিন্ন স্থানে নিতে হতে। এতে ভাড়াও ভালো পাওয়া যায়।উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র দাস জানান, দিনে সূর্যের তাপ ভালো ও রাতে শীতের পরিমাণ বেশী হলে রসের গুণগত মান খুব ভালো হয়। শীতের পরিমাণ কম ও দিনের বেলায় মেঘলা আকাশ হলে রস টক হয়ে থাকে।বায়েজীদ হোসেন নামের রস বিক্রেতা বলেন, ফেনী সহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেকে কল দেয় রস পাঠানোর জন্য।ভোরে রস সংগ্রহ করে সেগুলো একটু গরম করে হাঁড়িতে করে সেগুলো দূরদূরান্তে পৌঁছে দিই। গত সপ্তাহে কুমিল্লায় আমি নিজেই দিয়ে আসি।ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরকারী কলেজের প্রভাষক ফরিদুল ইসলাম জানান, সোনাগাজীর একজন রস সংগ্রহকারীর সাথে পরিচয় ছিলো। তার সাথে যোগাযোগ করলে সে আমার বাড়ীতে রস পৌঁছে দেয়। রস গুলোর মান অনেক ভালো এবং সুস্বাদু।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন জানান,খেজুরের রস সংগ্রহের কাজে এখানকার অনেক যুবক কাজ করছে। তারা অনেক লাভবান হচ্ছে। আমরা যদিও তাদের তেমন সুযোগ-সুবিধা দিতে পারছিনা। কিন্তু অনলাইন সহ সরাসরি তারা বাজারজাত করছে সুনামের সুহিত। মূল মৌসুমে দৈনিক ১৬-১৯লাখ টাকার রস বিক্রি হচ্ছে। যদি লিটার হিসেবে ধরি তাহলে ১৮-২১হাজার লিটার। প্রতিবছর কিছু গাছ মারা যাচ্ছে। আমরাও চেষ্টা করছি তাদের খেজুর গাছের চারা রোপনে উদ্ধৃদ্ধ করতে।গত বছর ৫শতাধিক চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, যুবকরা যেখানে হাত দেবে তার দৃশ্যপট পরিবর্তন হবে এটা স্বাভাবিক।তাদের কার্যক্রমে ভিন্নতা থাকায় তারা অনেক লাভবান হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য যুবকের চাকুরীর পিছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হতে পরামর্শ দিয়েছেন। এখানকার রস গুলো খুবই সুস্বাদু, গুনগত মানও অনেক ভালো।শীতের পরিমাণ বাড়তে রসের মান আরো বেশী ভালো হয়। সবমিলিয়ে রসের মৌসুমে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। যুবকদের এবিষয়ে আরো সচেতন করতে আমরা কিছু কর্মসূচি হাতে নেবো।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো জনপ্রিয় সংবাদ সমূহ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত- 2024 এ ওয়েব সাইটে প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Design & Development By Hostitbd.Com